বাংলাদেশের পীরগাছা উপজেলার মধ্যমা নামক স্থানে একটি রাজবাড়ি রয়েছে| যেটি চৌধুরীরানীর রাজবাড়ী নামে পরিচিত| স্থানীয়রা এটাকে জয় দুর্গা দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ী বলে ডেকে থাকে| আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৭০৩ থেকে ১৭০৪ এর দিকে 28 একর জায়গা নিয়ে এই জমিদার বাড়ি স্থাপন করা হয়েছিল| বর্তমানে রাজবাড়ীটি আসে একর জায়গার উপর অবস্থান করছে|
রাজবাড়ীঠের আশেপাশে অসংখ্য পুকুর লক্ষ্য করা যায়, এছাড়াও রাজবাড়ীটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেবী চৌধুরানীর খননকৃত ঢুসমারা খাল| ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এই খালটি আজও অক্ষত আছে| ইতিহাস থেকে জানা যায় দেবী চৌধুরানী এই নথি পথ দিয়ে গোপন অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করতেন|
দেবী চৌধুরানীর বাড়ির ইতিহাস
২৮ একর জায়গা নিয়ে ১৭০৩ থেকে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে রাজবাড়িটির গোড়াপত্তন শুরু হয়| জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অনন্তরাম| অনন্তরাম মূলত কোচবিহারের একজন রাজার কর্মচারী ছিলেন, এখানে কর্মচারী থাকা অবস্থায় সে এই এলাকার জমিদারি লাভ করেছিল|
১৭১১ সালের দিকে মুঘল বাহিনী আক্রমণ করেছিল কোচবিহার| সে সময় কোচবিহারের জনগণ মোঘল বাহিনীর দিকে যোগদান করে| ফলে রাজা অনন্তরামো মুঘলের শাসনামলে জমিদারিত্ব শুরু করে| জমিদার অনন্তরামের মৃত্যুর পর্যায়ক্রমে তার পুত্ররা জমিদারির পরিচালনা করতে থাকে| ইতিহাস থেকে জানা যায় জমিদার নরেন্দ্র নারায়নের কোন সন্তান ছিল না| তাই জমিদারির দায়িত্ব নেন জয় দুর্গা দেবী| জয় দুর্গা দেবী জমিদারের স্ত্রী ছিলেন|
দেবী চৌধুরানী ১৭৮৩ সালে পূজা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন| ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতবর্ষে নারী বিদ্রোহের যে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল তা দেবী চৌধুরানীর হাত ধরেই| আমরা ইতিহাসে অস্ত্র হাতে ফকির সন্ন্যাসীকে দেখে থাকি মূলত সেটি হলেন দেবী চৌধুরানী| দেবী চৌধুরানী খুবই সাধারণ মনের মানুষ ছিলেন| তিনি একজন রাজা হয়ে প্রজাতের সাথে বিভিন্ন আন্দোলনের চোখ দিতেন এবং একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন| সাহিত্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে নিয়ে দুটি বই রচনা করেছেন| রাজবাড়ীটিতে বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা করে থাকে|
দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী রাজবাড়ীর বর্তমান অবস্থা
দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ীটির নাট্যমন্ত্রীর এবং কাছারি ঘরটা বর্তমানে উপজেলার রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়| চৌধুরানীর বাড়ি বেশ কয়েকটি বড় খবর থাকলেও বর্তমানে পরিচর্যার অভাবে তা প্রায় ধ্বংসের মুখে| আশেপাশের দেয়ালগুলো আস্তে আস্তে খুলে পড়ার মত অবস্থা| বাড়ির সামনে একটি বড় গেট আছে যেটিও আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে| বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উচিত সঠিক পরিচর্যা করে ইতিহাসের এই নিদর্শন টিকে টিকিয়ে রাখার|
রংপুর থেকে কিভাবে আসবেন: বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে সরাসরি রংপুরগামী বাসে করে রংপুর শহরে আসতে হবে|রংপুর শহর থেকে পীরগাছা উপজেলা দূরত্ব ২০ কিলোমিটার| রংপুর শহর থেকে সিএনজি অথবা অটো রিক্সা করে পীরগাছা উপজেলায় যেতে হবে| রংপুর শহর থেকে মাত্র 30 থেকে 50 টাকা ভাড়ায় সরাসরি দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ীতে পৌঁছাতে পারবেন|ট্রেনে করে সরাসরি রংপুর যেতে পারবেন| রেল স্টেশন থেকে সিএনজিতে ৩০ টাকায় দেবী চৌধুরানী রাজবাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব|
খাওয়া ও থাকা:দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ীটি পীরগাছা উপজেলায়| পীরগাছা উপজেলায় বেশ কয়েকটি রেস্তোরা আছে সেখানকার খাবারের মান মোটামুটি ভালো| তবে এর থেকেও ভালো মানের খাবার পেতে হলে পীরগাছা উপজেলা থেকে সরাসরি রংপুর শহরে আসতে হবে| রংপুর শহরে আসলে ভালো মানের খাবারের পাশাপাশি থাকার জন্য হোটেলও পেয়ে যাবেন|হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হবে| আমের মৌসুমে রংপুর গেলে অবশ্যই হাড়িভাঙ্গা আম নিয়ে আসবেন| রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা পুরো বাংলাদেশে রয়েছে|
জানা-অজানা:
বাংলার দস্যু রানী বলা হয় কাকে?
উত্তর: দেবী চৌধুরানী কে বলা হয় বাংলার দস্যু রানী| ইতিহাস থেকে জানা যায় সে সময় রংপুর অঞ্চলের সর্বমোট ১২ জন চৌধুরানী ছিলেন|দেবী চৌধুরানী ছিলেন কাউনিয়া উপজেলার জয় দুর্গা দেবী নামে এক নারী|
কত সালে দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ী নির্মাণ করা হয়?
উত্তর: ১৭৩ থেকে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে ২৮ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়|
দেবী চৌধুরানীর স্বামীর নাম কি ছিল?
উত্তর: জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ|
[…] দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী […]
[…] দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী […]