কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী বঙ্গবন্ধু উদ্যান যা বেলস পার্ক নামেও পরিচিত, বরিশাল শহর থেকে মাত্র ৪ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। উদ্যানটি বরিশাল শহরের সুন্দর স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আছে একটি খেলার মাঠ, হেলিপ্যাড, হাঁটার পথে,এবং প্রচুর গাছগাছালি। গণপূর্ত বিভাগের মালিকানায় উদ্যানটি পরিচালনা করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন।
বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) ইতিহাস
এনডি বিটসন বেল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপালন কালে ১৮৯৬ সালে এই উদ্যানটি নির্মাণ করেন। বরিশালে বাংলার গভর্নর-লেফটেন্যান্ট স্যার আলেকজান্ডার ম্যাকেন্জির সফরকে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে বিটসন বেল এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে সময় এটি শহর রক্ষা বাঁধ সড়ক ও আবাসিক এলাকার মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণ করা হয়েছিলো। বর্ষাকালে কীর্তনখোলা নদীর পানি যেন শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সারিবদ্ধভাবে বোতল পাম ও ঝাউ গাছ লাগানো হয় যেন পানির সাথে মাটি ধুয়ে না যেতে পারে। রাস্তার পূর্ব পাশে সিমেন্টের বেঞ্চ ছিলো বসার জন্য। বরিশাল শহরের উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য ও মুসলিম শিক্ষায় বিটসন বেলের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামানুসারে বেলস পার্ক করা হয়।
উদ্যানটি নির্মাণের পর থেকেই বরিশাল শহরের প্রধান খেলার মাঠ হয়ে উঠে এবং বরিশাল বিভাগের ক্রীড়া ও ক্রীড়াবিদদের সকল কার্যক্রম এই উদ্যানকে ঘিরেই হতো। এই উদ্যানে অনেক বড় বড় জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ অনেক জাতীয় নেতা এসেছেন এবং বক্তৃতা দিয়ে গেছেন। বর্তমানে এই উদ্যানে নিয়মিতভাবে বৃক্ষমেলা, বাণিজ্যমেলা, রাষ্ট্রীয় দিবসে কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পার্কটি নির্মাণের ঠিক ১০০ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বেলস পার্ক নামটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু উদ্যান নামকরণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এই উদ্যানে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন, তার আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে উদ্যানে একটি মুক্ত মঞ্চ ও ম্যুরাল তৈরি করা হয়। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে এই উদ্যানে নতুন করে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু উদ্যান বিবরণ
৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৫০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট উদ্যানটির চারপাশে একটি হাঁটার পথে আছে। একটি ছোট হ্রদ রয়েছে উত্তর পাশে। বসার জন্য বেঞ্চ ও ছাতি দেয়া আছে। উদ্যান জুড়ে অসংখ্য গাছপালা আছে। বরিশাল শহরের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ভোর আর বিকেলে বেলাতে উদ্যানে শরীরচর্চা করতে আসেন
উদ্যানে বসেই কীর্তনখোলা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বরিশাল শহরবাসী পরিবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে এখানে ঘুরতে আসতে পছন্দ করে।
আসবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে তিনভাবে বঙ্গবন্ধু উদ্যান দেখতে আসতে পারবেন। যারা সরক পথে ভ্রমণে আগ্রহী ঢাকার গুলিস্তান বা সায়দাবাদ থেকে বরিশাল গামী বাসে আসতে পারবেন। বাস ভেদে ভাড়া কমবেশি হবে। নৌপথে আসতে চাইলেও আসতে পারবেন ইচ্ছে হলে, সেক্ষেত্রে সদরঘাট থেকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায়। আপনি চাইলে বিমানযোগে আসতে পারেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে বরিশাল আসা যায়। বরিশাল নেমে যে কোনও স্থানীয় বাহনে করে চলে আসতে পারবেন বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।
আবাসন ব্যবস্থা
বরিশালে রাত্রিযাপনের জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল আছে, রোদেলা, সেডোনা, এথেনা, রিচমার্ট গেস্ট হাউস, এরিনা, গ্রান্ড প্লাজা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সাধারণ মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে যেগুলোতে কম খরচে থাকা যায়।
কোথায় খাবেন
বরিশাল শহরে বেশকিছু চাইনিজ, ফাস্টফুড ও বাঙ্গালী খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। গৌর নদীর দধি ও মলিদা বরিশালের বিখ্যাত। আর বরিশালে বেড়াতে গেলে হোটেল সকাল সন্ধ্যার লুচিসবজি ও রসমালাই একবার না খেলেই নয়।
বরিশালের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো
- ভাসমান পেয়ারা বাগান
- অক্সফোর্ড মিশন
- মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ
- লাকুটিয়া জমিদার বাড়ী
- শঙ্কর মঠ
- বিবির পুকুর
- দুর্গা সাগর দীঘি
- গুটিয়া মসজিদ
- সাতলা ও শাপলা গ্রাম জনপ্রিয়