বাঘা শাহী মসজিদ রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত।মসজিদটি ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরাত শাহ তৈরি করেছিলেন। তাই বলা যাই মসজিদটির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। আজকে আমরা আপনাদেরকে বাঘা শাহী মসজিদের খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে জানাবো।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনার জানতে পারবেন বাঘা শাহী মসজিদের অবস্থান ও এর ইতিহাস। এছাড়াও রাজধানী ঢাকা ছাড়া অন্যান্য শহরগুলো থেকে কিভাবে সহজে মসজিদ ভ্রমন করতে পারেন সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব।
বাঘা শাহী মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বাঘা শাহী মসজিদের সাথে মিশে আছে দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের ইতিহাস।বাঘা শাহী মসজিদের ইতিহাস আরো অনেক ৫০০ বছরের পুরনো। হযরত শাহ তুল্লাহ রহমাতুল্লাহ ,হযরত দানেশমান রহমতউল্লাহ সহ অনেক বির আউলিয়া বাঘার মাটিতে সমাহিত আছেন।
প্রাচীনকালে এই স্থানে প্রচুর পরিমাণ জঙ্গল ছিল। জঙ্গল এতটাই গভীর ছিল সেখানে বিপুল সংখ্যক বাঘের আবির্ভাব দেখা যেত। বাঘের ভয়ের কারণে মানুষ এই অঞ্চলে খুবই কম চলাফেরা করতো পরবর্তীতে ১৫০০ সালের দিকে শাহদৌলা নামক একজন সাধক তার কিছু সঙ্গীকে নিয়ে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। সাধক এসেছিল সুদূর বাগদাদ থেকে। তিনি ছিলেন আরবের বিখ্যাত খলিফা হারুনুর রশিদের বংশধর। কয়েক বছর পর সেই সাধকের ছেলেও এ অঞ্চলে চলে আসে, এবং তাদের সাথে স্থানীয় মানুষরাও গাছ কেটে স্থাপন শুরু করে।
তার ছেলে দানিশ এখানে ইসলাম প্রচারের জন্য মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। এবং সেই বক্তব্য ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করে। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি এটি ছিল সে সর্বপ্রথম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক প্রসার করতে থাকে। পরবর্তীতে ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৫২৪ সালে তা শেষ হয়।
নাসির উদ্দিন নুসরাত শাহ পরবর্তীতে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে মসজিদের পাশে একটি বড় দেখি খনন করেছিলেন। যা আয়তনে প্রায় ৫৩ বিঘা।কোন এক ঈদুল ফিতরের সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলন কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে কালের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলা নিয়ে কার্যক্রম হারিয়ে গেলেও প্রতিবছর এখানে ঈদুল ফিতরের শেষে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। যদিও করনার সংক্রমণের পর এখানে আর কোন মেলা হতে দেখা যায়নি।
এরপর সুলতান আমলের পতন হয় এবং মুঘল আমলের সূচনা হয়।বাংলার সিংহাসনে তখন ব্যাপক পরিবর্তণ এসেছিল। বাংলার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু ১৮৯৭ সালের একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প সবকিছু এলোমেল করে দেয়। ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু স্থাপত্য নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি গম্বুজ ও ছাদ ও ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল শিক্ষক ও অনেক শিক্ষার্থীর।
সেখান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।অঞ্চলের মানুষ ইসলাম থেকে অনেকটা দূরে চলে যায়। বেশ কয়েক বছর পর ১৯৬৩ সালে সেই স্থানে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়। যা এখনো চলমান আছে।
ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া স্থাপত্য বেশ কিছুদিন অপরিতক্ত ছিল। এরপর এর সংস্কার করা নামাজ আদায় করা হত। এবং এটি পরবর্তীতে বাঘা শাহী মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাঘা শাহী মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
সমতল মাটি থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে।এখানে মোট গম্বুজ রয়েছে দশটি।সর্বমোট ২৫৬ বিঘা জমির উপর একটি অবস্থিত।মসজিদের ভেতরে ছয়টি স্তম্ভ ও চারটি মেহরাব রয়েছে। যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম কারুকার্য।মাঝখানের দরজার উপরে ফারসি ভাষায় একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদের প্রবেশদ্বার চারটি।এবং পরম মসজিদের চারপাশে উঁচু দেয়াল রয়েছে।যার দুপাশে একটি করে ফটক করেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
রেলপথ: বিভাগীয় যে কোন শহর থেকে রেলপথে বাঘা শাহী মসজিদে আসতে পারবেন। এজন্য আপনাকে ট্রেন থেকে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি ধরে বাঘা শাহী মসজিদে আসতে পারবেন। ঈশ্বরদী থেকে বাঘা শাহী মসজিদে সিএনজি ভাড়া গুনতে হবে ৫০ টাকা।
এছাড়াও আড়ানী রেলস্টেশনের নেমে আপনারা সিএনজি করে বাঘ শাহী মসজিদে আসতে পারেন। আড়ানী থেকে বাঘা শাহী মসজিদ পর্যন্ত ভাড়া লাগবে ৩০ টাকা।
সড়ক পথ: বিভাগীয় যেকোনো শহর থেকে সরাসরি বাঘার বাস পেয়ে যাবেন। ঢাকা থেকে বাঘার বর্তমান ভাড়া ৬৫০ টাকা।
এছাড়াও কেউ যদি মনে করেন পানি পথে বাঘা আসবেন তাহলে সেটাও করতে পারেন।বাঘা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী।কুষ্টিয়ার পাটুরিয়া ঘাটে বাঘা থেকে খুবই সন্নিকটে।
দর্শনীয় স্থান সমূহ:
- বাঘা শাহী মসজিদ
- প্রাচীন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়
- বাঘা জাদুঘর
- বাঘা দীঘা
- সাধকদের মাজার
- প্রাচীন ছোট মহিলা মসজিদ
- শাহী মসজিদ সংলগ্ন উৎসব পার্ক
বাঘার বিখ্যাত খাবার:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা মূলত আম চাষের জন্য বিখ্যাত। রাজশাহীর সিংহভাগ আম বাঘা ও চারঘাট এই দুই উপজেলায় উৎপাদন হয়। রাজশাহীর আম অত্যন্ত সুস্বাদু। আমের মৌসুমে বাঘায় আসলে রসালো আমের সঠিক স্বাদ নিতে পারবেন। আম ছাড়াও এই উপজেলা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত।পুরো দেশ জুড়ে বাঘার খেজুর গুড়ের চাহিদা ব্যাপক।
জানা অজানা:
- কত টাকার নোটে বা বাঘা শাহী মসজিদের ছবি ছিল? উত্তর: 50 টাকার নোটে।
- কত সালে বাঘা শাহী মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল? উত্তর :১৫২৩ সালে।
- বাঘা দীঘার আয়তন কত? উত্তর: প্রায় ১৭ একর।