বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের জেলা রংপুর তথা পুরান রংপুরে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত।এটি একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।এই তাজহাট জমিদার বাড়ি পর্যটক এর কাছে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তাজহাট জমিদার বাড়ির ইতিহাস
অষ্টাদশ শতকে রত্ন ব্যবসায়ী মান্নালাল ব্যবসায়িক কারণে রংপুরের মাহীগঞ্জে এসে বসবাস করা শুরু করেন। বসবাস কালে তিনি একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন।কিন্তু ১৮৯৭ সালের রাজপ্রাসাদের একটি ভবন ধ্বংস হয়ে পড়ে ভূমিকম্পের কারণে। এবং তিনি আহত হয়ে কিছুদিন পর মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর জমিদারি দায়িত্ব পান তার দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায়।বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তিনি ২,০০০ শ্রমিক নিয়ে একটি জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন।
যা বর্তমানে তাজহাট জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। প্রায় 2 কোটি টাকা ব্যায়ে ১৯১৭ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ ভবনটি চারিদিকে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য।ভবনটির দুই পাশে দুটো পুকুর ও ফুলের বাগান, মেহুগুনি গাছ, কামিনী গাছ, কাঁঠাল গাছ, আম গাছের সারি। রাজা গোপালের কিছু ব্যবহৃত জিনিস এই বাড়িতে রাখা রয়েছে। তবে অনেকের কাছে এটি দেখতে আহসান মঞ্জিল এর মত।বাংলাদেশের অন্যান্য প্রাসাদের থেকে এ প্রাসাদ টি দেখতে একটু আলাদা।৩১ টি সিঁড়ির প্রতিটিতে ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথর দিয়ে নিয়মিত হয়েছে।
যা দর্শকের কাছে মন কেড়ে নেয়ার মত। এ রাজবাড়ীটির আশ্চর্যজনক তথ্য হলো এর গুপ্তসিঁড়ি রয়েছে। এই গুপ্ত সিঁড়ি সুরঙ্গের সাথে যুক্ত হয়ে ঘাগট নদীর সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। যদি এটি প্রমাণ না মিললেও অনেক মানুষের কাছ থেকে শোনা যায়। গোপাল রায় তার রানির জন্য একটি সুন্দর ফোয়ারা নির্মাণ করেছিলেন। সেই পড়াটি শ্বেতশুভ্র মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং তাতে সবুজাভ নকশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।২১০ ফুট প্রশস্ত ও চার তালার সমান উঁচু হে ভবনটি প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত মনে করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে এটি কি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা দেয়। পরে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৫ সালে এই রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় রংপুর জাদুঘর হিসেবে স্থান পায়। এখানে রয়েছে আরবি ভাষায় লিখা বেশ কিছু পান্ডুলিপি। মোগল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন সহ মহাভারত ও রামায়ণ রয়েছে এখানে। এছাড়াও এখানে প্রায় 300 টি নিদর্শন রয়েছে।
প্রদর্শনের সময়:রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি গ্রীষ্মকালীন সময়ে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১ টা থেকে ১:৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি থাকে।শীতকালীন সময়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সব সরকারি ছুটির দিনে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
টিকিট মূল্য:জাদুঘরের গেটের পাশে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যায়। টিকিট মূল্য জনপ্রতি বিশ টাকা। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকিট মূল্য নেয়া হয় না। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য টিকিট মূল্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।সারভুক্ত বিদেশীদের টিকিট মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশীদের ২০০ টাকা।প্রাসাদ থেকে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে নির্দিষ্ট ফ্রি দিয়ে ঢুকতে হবে।
কিভাবে যাবেন
রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত। ট্রেন অথবা বাস যোগাযোগে রংপুর শহরে পৌঁছাতে পারেন।এছাড়া ঢাকার বাসে উঠলে জাদুঘরের সামনে নামা যায়। তাছাড়া রংপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়ায় জাদুঘরে যেতে পারবেন।
রংপুরে কোথায় থাকবেন
রংপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। হোটেল নর্থ ভিউ, হোটেল তাশপিয়া, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল দি পার্ক, হোটেল তিলোত্তমা ইত্যাদি।
কোথায় খাবেন
তাজহাট জমিদার বাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো রেস্টুরেন্ট আছে| এখানে স্বল্প টাকায় খাবার পেয়ে যাবেন|তবে অনেক ভালো মানের খাবার পাওয়ার জন্য আপনাকে রংপুর শহরে রেস্টুরেন্টে আসতে হবে|
তাজহাট জমিদার বাড়ির কাছাকাছি আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান
১.ভিন্ন জগত পার্ক
২.প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক
৩.লালদীঘি ৯ গম্বুজ মসজিদ
৪.পায়রাবন্দ