চাখার বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওয়াজেদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ২৭ শতক জমির উপর শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর অবস্থিত। এটি বরিশাল থেকে ২৪ কিঃমিঃ দূরে বানারিপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কাশেম ফজলুল হক, যিনি সাধারণ মানুষের কাছে শের-ই-বংগাল ও হক সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৮২ এই জাদুঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। জাদুঘরটির দৈর্ঘ্য ৮৩ মিটার এবং প্রস্থ ১৪.৬০ মিটার। ৪ কক্ষ বিশিষ্ট জাদুঘরটির ২ টি প্রদর্শনী কক্ষ, একটি গ্রন্থাগার ও একটি অফিসকক্ষ।
যা যা দেখতে পাবেন
জাদুঘরটির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয় কিছু বিরল আলোকচিত্র, শেরে বাংলার ব্যবহৃত আসবাবপত্র, চিঠিপত্র ও সৈয়দ আনিসুজ্জামান নামক এক ব্যক্তির শেরে বাংলাকে পাঠানো সুন্দরবন থেকে শিকার করা কুমির দিয়ে। জাদুঘরে প্রবেশের পর বামপাশে শেরে বাংলার একটি বিশাল প্রতিকৃতি, তার জীবনকর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত শেরে বাংলার বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক ছবি দেখা যায়।
জাদুঘরের দুই প্রদর্শনী কক্ষে আছে আবুল কাশেম ফজলুল হকের ব্যবহৃত আরাম কেদারা, তোষক, আলনা, খাট, ড্রেসিং টেবিল, টুল, পড়ার চেয়ার-টেবিল, হাতের লাঠি, পানীয় পানের গ্লাস। কালো পাথরে নির্মিত অষ্টভুজা মারীচী দেবীমূর্তি, কালো পাথরের বড় শিবলিঙ্গ, ব্রোঞ্জের খসপর্ণ বৌদ্ধমূর্তি, সাদা পাথরের ছোট শিবমূর্তিসহ স্বর্ণমুদ্রা, ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা, শ্রীলঙ্কা, ব্রিটিশ ও সুলতানি আমলের তাম্রমুদ্রাসহ আরও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়।
প্রবেশমূল্য ও সময়সূচি
এই জাদুঘর গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে ( মঙ্গলবার থেকে শনিবার)। প্রতিদিন খোলার দিনে দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত মধ্যাহ্ন বিরতির বন্ধ থাকে। শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য বন্ধ থাকে ১২.৩০ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত। এ ছাড়া রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির বন্ধ থাকে এবং সোমবার দুপুর ২ টা থেকে খোলা থাকে। এখানে বাংলাদেশীদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ১০০ টাকা প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা আছে।
আসবেন যেভাবে
ঢাকা থেকে তিনভাবে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর দেখতে আসতে পারবেন। যারা সরক পথে ভ্রমণে আগ্রহী ঢাকার গুলিস্তান বা সায়দাবাদ থেকে বরিশাল গামী বাসে আসতে পারবেন। বাস ভেদে ভাড়া কমবেশি হবে। নৌপথে আসতে চাইলেও আসতে পারবেন ইচ্ছে হলে, সেক্ষেত্রে সদরঘাট থেকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায়। আপনি চাইলে বিমানযোগে আসতে পারেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে বরিশাল আসা যায়। বরিশাল নেমে লোকাল বাসে বা সিএনজি রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারবেন ঐতিহাসিক শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর।
আবাসন ব্যবস্থা
বরিশালে রাত্রিযাপনের জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল আছে, রোদেলা, সেডোনা, এথেনা, রিচমার্ট গেস্ট হাউস, এরিনা, গ্রান্ড প্লাজা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া সাধারণ মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে যেগুলোতে কম খরচে থাকা যায়।
কোথায় খাবেন
চাখারে ভালো মানের খাবার হোটেল নেই। স্থানীয় সাধারণ হোটেলে দেশীয় খাবার খেতে হবে। তবে বরিশাল শহরে বেশকিছু চাইনিজ, ফাস্টফুড ও বাঙ্গালী খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। গৌর নদীর দধি ও মলিদা বরিশালের বিখ্যাত। আর বরিশালে বেড়াতে গেলে হোটেল সকাল সন্ধ্যার লুচিসবজি ও রসমালাই একবার না খেলেই নয়।
আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
বরিশালের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো ভাসমান পেয়ারা বাগান, অক্সফোর্ড মিশন, মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ী, শঙ্কর মঠ, বিবির পুকুর, দুর্গা সাগর দীঘি, গুটিয়া মসজিদ, সাতলা ও শাপলা গ্রাম জনপ্রিয়।