রাজশাহী জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম পুঠিয়া রাজবাড়ী| বাংলাদেশের রাজবাড়ী গুলোর মধ্যে বেশ সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা আছে এটি| রাজশাহী জেলার পটিয়া উপজেলায় রাজবাড়ীটি অবস্থিত| রাজশাহী পুঠিয়া মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত| রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ি অবস্থিত|
আজকে আমরা আপনাদের পুঠিয়া রাজবাড়ী নিয়ে সীমিত পরিসরে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব| আমাদের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা জানতে পারবেন রাজবাড়ীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য| এর বর্তমান অবস্থা এবং বিভাগীয় শহরগুলো থেকে কিভাবে কম খরচে পুঠিয়া রাজবাড়ী ভ্রমণ করতে পারেন| তাহলে আসুন জেনে নেই পুঠিয়ার রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এর মন্দির গুলোর পরিচিতি|
পুঠিয়া রাজবাড়ীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
রাণী হেমন্ত কুমারী বাসভবন হল পুঠিয়া রাজবাড়ী| রানী হেমন্ত কুমারী আকর্ষণীয় এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন 1895 সালে| রানী হেমন্ত কুমারই তার শাশুড়ি শরৎ সুন্দরী দেবী সম্মানে নির্মাণ করেছিলেন | মুঘল আমলে তৎকালীন যে রাজ্যগুলোর মধ্যে জমিদার ছিল তার মধ্যে পুঠিয়া ছিল প্রাচীন| জানা চায় যে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে রাজা উপাধি পাওয়ার পর তার রাজবাড়ী পরিচিত লাভ করে| জমিদারির ভাগ হয় 1944 সালে| উক্ত ভাগাভাগিতে বড় ছেলে পান সম্পত্তির পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা| আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি 1950 সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়েছিল| তবে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলেও রাণী হেমন্ত কুমারীর বানানো এই স্থাপনা আজও টিকে আছে|
রাজবাড়ীটির চারপাশে পরিখা খনন করা আছে| সুসময় শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতেই রাজবাড়ীর চারিদিকে এমন পরীক্ষা খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়| পরীক্ষাগুলো বর্তমানে ভিন্ন ধরনের নামে পরিচিত লাভ করেছে, গোবিন্দ সরোবর, মরা চৌকি, শিবসাগর, গোপাল চৌকি ও বিকি চৌকি| পরিখাগুলো ছাড়াও রাজবাড়ীর মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশাল পুকুর আছে যার নাম শ্যামসাগর| উঠে রাজবাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বড় বড় মন্দির আছে| আসুন মন্দিরগুলো নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক|
পুঠিয়া রাজবাড়ীতে দর্শনার্থীরা যা যা দেখতে পারবেন তার একটি ছোট্ট লিস্ট দেওয়া হল:
- পুঠিয়া দৌল মন্দির
- বড় শিব মন্দির
- ছোট শিব মন্দির
- ছোট গোবিন্দ মন্দির
- বড় গোবিন্দ মন্দির
- ছোট আহ্নিক মন্দির
- বড় আহ্নিক মন্দির
- জগদ্ধাত্রী মন্দির
- রথ মন্দির
- গোপাল মন্দির
- সালামের মঠ
- কেষ্ট ক্ষ্যাপার মঠ
- হাওয়াখানা
পুঠিয়া দৌল মন্দির: এমন একটি পুঠিয়া রাজবাড়ীর সম্মুখ স্থলে অবস্থিত| প্রত্যেকটির চারতলা এবং এর প্রত্যেক বাহুর পরিবার ২১.৫৪ মিটার| চুন সুরকি ইস্ট দিয়ে মন্দির গড়ে তোলা হয়েছিল| সমতল ভূমি থেকে এ মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার| রানী হেমন্ত কুমারী উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে নির্মাণ করে|
পুঠিয়া বড় শিব মন্দির: এই মন্দিরটিয়া বাজারের বাম পাশে দীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত|প্রধান প্রবেশপথ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত|পিরামিডের আকৃতিতে নির্মাণ করা হয়েছে| মন্দিরটিতে এখনো স্থানীয়রা পূজা করে থাকে| জানা যায় যে এ মন্দিরটি রানী ভুবনময়ী ১৮২৩ সালে নির্মাণ করে| তাই এটিকে ভুবনেশ্বর মন্দির বলা হয়|
পুঠিয়া বড় আহ্নিকমন্দির:জমিদার বাড়ির পাশে একই সাথে তিনটি মন্দির আছে| তিনটি মন্দিরের মধ্যে দক্ষিন দিকের মন্দির হল চার আনি বড় আহ্নিক মন্দির| মন্দিরটি তিন কক্ষ বিশিষ্ট এবং পূর্ব দিকে এর প্রবেশপত্র রয়েছে| মন্দির এর ছাদ দোচালা| মন্দিরের চারপাশ পড়া মাটির ফলক দ্বারা সাজানো হয়েছে| ইতিহাস থেকে জানা যায় এটি খ্রিস্টীয় ১৭-১৮ শতকে নির্মিত হয়েছে|
পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির: এই মন্দিরটি জমিদার বাড়ির আঙ্গিনে অবস্থিত| মন্দিরে অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক লক্ষ্য করা যায়| উদ্ভিদ প্রাণীর বিভিন্ন ধরনের ছবি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে পাশাপাশি রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনীর প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে| ইতিহাসবিদ ধারণা করেন মন্দিরটি ১৮ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল|
ছোট শিব মন্দির: প্রতিটি মন্দিরের মতো এটি বর্গ আকৃতির| রাজবাড়ী থেকে প্রায় ১০০ মিটার দক্ষিণ দিকে এ মন্দিরটি অবস্থিত| দক্ষিণ দিকে একটি মাত্র প্রবেশপত্র রয়েছে|
জগন্নাথ রথ মন্দির: বড় শিব মন্দিরের পাশে এটি অবস্থিত| সাগরদিঘির দক্ষিণ পাশে|মন্দিরটির চারপাশে প্রবেশ পথ আছে| যানা চাই যে ১৮২৩ সালে রানীভবনময়ী এটি নির্মাণ করেন|
চার আনি জমিদার বাড়ি: চারানি থেকে পাঁচ আনি জমিদার বাড়ির মধ্যে দূরত্ব 125 মিটারের| শ্যামসাগর দীঘির পশ্চিম পাশে চারআনি জমিদার বাড়ি অবস্থিত|
গোপাল মন্দির: গোপাল মন্দির চারআনিতে অবস্থিত| এটির পাশে রয়েছে বড় আহ্নিক মন্দির| উচ্চতায় প্রায় ৮ মিটার লম্বা| ওপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে মন্দিরের পশ্চিম পাশে|
যাতায়াত ব্যবস্থা:
সড়কপথে বিভাগীয় যে কোন শহর থেকে রাজশাহী অথবা নাটোরে আসতে হবে| অথবা ট্রেনে করে রাজশাহী অথবা নাটোরে পৌঁছাতে পারেন| এছাড়াও আকাশ পথে রাজশাহীতে আসতে পারবেন|
রাজশাহী ও নাটোর থেকে বাস অথবা লেগুনাতে করে পুঠিয়া বাজারে আসতে হবে| রাজশাহী শহর থেকে ভাড়া করতে হবে ১০০ টাকা এবং নাটোর শহর থেকে ৩০ টাকা| পুঠিয়া বাজার থেকে মাত্র ১০ টাকায় পুঠিয়া রাজবাড়ীতে আসতে পারবেন| বাজার থেকে রাজবাড়ির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার|
ঢাকা থেকে রাজশাহী ও নাটোরের বাস ভাড়া ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা|
থাকা ও খাওয়ার সুবিধা:
রাজবাড়ির আশেপাশে তেমন কোন বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই| তবে ছোট পরিসরে আপনি খাবার পাবেন| তবে উন্নত মানের সেবা পাবার জন্য আপনাকে নাটোর অথবা রাজশাহী শহরে যেতে হবে|
প্রবেশ মূল্য:রাজবাড়ীতে ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কোন প্রবেশ মূল্য নেই| রাজবাড়ীর আশেপাশের যেকোনো মন্দির আপনি অনায়াসে করতে পারবেন| তবে মূল ভবনের ওপরে বর্তমানে একটি জাদুঘর করা হয়েছে| যেখানে প্রবেশ করার জন্য বিশ টাকা দিতে হয়|শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় রয়েছে| এটি সকাল আটটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে|
সাধারণ প্রশ্নোত্তর:
- বাঘা থেকে পুঠিয়া দূরত্ব কত?
৩৩ কিলোমিটার - রাজশাহী থেকে পুঠিয়া দূরত্ব কত?
৩০ কিলোমিটার - পুঠিয়া থেকে নাটোরের দূরত্ব কত?
১৮ কিলোমিটার - রাজবাড়ীর অপর নাম কি?
পাঁচ আনীর রাজবাড়ী - পুঠিয়া রাজবাড়ি কে নির্মাণ করেন?
রানী হেমন্ত কুমারী - কত সালে পুঠিয়ার রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয়?
১৮৯৫ সালে - রাজবাড়ীর রাজার নাম কি?
রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা পিতাস্বর| তিনি মূলত ষষ্ঠতর শতাব্দীর শেষ এবং সপ্ততার শতাব্দীর প্রথম দিকে এই অঞ্চলে রাজধানী স্থাপন করেছিল|