বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর হল এটি|পরেরটা জাদুঘর বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে সুনির্দিষ্ট ভাবে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট|জাদুঘরের ভেতরটা ঘুরলে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যাবে| যা ইতিহাস বিদদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ| আজকে আমরা বরেন্দ্র জাদুকর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব|
বাংলার সবচেয়ে প্রাচীনতম জাদুঘরটিকে নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না| জাদুঘরে রয়েছে শত বছরের পুরনো বাংলার ঐতিহ্য| বাংলার তরুণ প্রজন্মকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্যতম একটি জাদুঘর এটি|
জাদুঘর তৈরীর ইতিহাস: বরেন্দ্র জাদুঘরের পাশের জেলায় ছিল রাজকুমার শরৎকুমারের বাসা| শরৎ কুমার ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র| তিনি তৎকালীন বড় বড় শহরগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন| মিশরের প্রাচীন শহরগুলোতে তিনি ভ্রমণ করেছেন| মিশরের প্রাচীন শহর গ্রহণ করার সময় নগর গুলো ধ্বংসাবশেষ দেখে সে চিন্তা করে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংসাবশেষ নিয়ে | সে ভাবনা থেকে সর্ব প্রথম বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করে| শরৎকুমার তখন নিজের অর্থ দিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন| আরো জানা যায় সেটার নকশাও তিনি নিজেই করেছিলেন| শরৎকুমারের সাথে অক্ষয় কুমার মৈত্র এবং রমাপ্রসাদ চন্দ্র সময় শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছিল|
বরেন্দ্র জাদুঘরে কিভাবে আসবেন: বরেন্দ্র জাদুঘর টি রাজশাহী জেলায় অবস্থিত| বিভাগীয় শহরগুলো থেকে যেকোন মাধ্যমে রাজশাহী শহরে আসতে হবে| এরপর যেকোনো অটো অথবা রিক্সা কে পড়লে মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যেই বরেন্দ্র জাদুঘরে পৌঁছে দেবে|
জাদুঘরের সময়সূচী: সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সকলের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে| প্রতি সপ্তাহে শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত খোলা থাকে|বৃহস্পতির শুক্র সাপ্তাহিক ছুটি| জাদুঘরের টিকিট মূল্য ২০ টাকা|
জাদুঘরের ভেতরে নিদর্শন:
বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘরে বর্তমানে প্রায় ৯ হাজারের অধিক প্রত্যাাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে| জাদুঘরটির ভেতরে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আছে| এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পাথরের মূর্তি, বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রূপ্য মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাটচন্দ্র গুপ্তের গুপ্ত মুদ্রাও এখানে সংরক্ষিত আছে| জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে আনুমানিক ৫ হাজারের অধিক পুথি| এরমধ্যে তিন হাজারের অধিক সংস্কৃত ভাষায় এবং বাকিগুলো বাংলা ভাষায় লিখিত|
জাদুঘরের ভেতরে ঢুকতে প্রথমে সেই তিনজনের ছবি দেখতে পাবেন যারা জাদুঘরটি তৈরি করেছিল| এরপর সামনের দিকে দেখা যাবে কিছু টেরাকোটার বিষ্ণুমূর্তি| এই মূর্তিটি পোড়ামাটির তৈরি, তবে পোড়ামাটির তৈরি হলে এখনও সেটি অক্ষত আছে| এ ধরনের মতে ঢাকা জাদুঘরের দুইটি রাখা ছিল, ২০০৭ সালের ফ্রান্সের জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য বিমানবন্দর নেওয়ার সময় তা চুরি হয়ে যায়| তাই বর্তমানে এই জাদুঘরেই দেখা মিলবে এই ধরনের মূর্তির|
এরপরে দেখা যাবে লক্ষণ সেনের শিলালিপি বাগবাড়ী| লক্ষণ সেনের রাজবংশের পরিচয় লেখা আছে শিলালিপিতে| যাহা “ কুটিল “ হরফে লেখা| এখানে আরো আছে লক্ষণ সেনের একটি লিপি| যা আনুমানিক ১১৮৪ থেকে ১১৮৫ সালের| যা আর অন্য কোথাও নেই|
ভেতরের দিকে গেলে দেখা যাবে একটি গঙ্গা মূর্তি| গঙ্গা মূর্তিটির পুরো দেহে গয়না দিয়ে আবৃত| ধারণ করা হয় মূর্তিটি দ্বাদশ শতাব্দীর| এ ছাড়া আরো রয়েছে অর্ধনারীশ্বর| অর্থাৎ অর্ধেক নারী এবং অর্ধেক পুরুষ| শরীরের ডান দিকে পার্বতী এবং বামদিকে শিব|
জাদুঘরের নতুন ভবন:
বরেন্দ্র জাদুঘরের নতুন ভবনে নিচ তলায় আমরা বাংলার মুসলিমদের ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে পায়| জানা যায় যে জাদুঘরের নতুন এই ভবনটিতে ভিজুয়াল গ্যালারি তৈরি করা হবে| যেখানে দর্শনার্থীরা প্রজেক্টর এর মাধ্যমে জাদুঘরের সকল জিনিস এক জায়গায় দেখতে পাবেন| এখানকার শুভেচ্ছা মূল্য হিসেবে নেওয়া হবে দশ টাকা| দশ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য কোন টাকা নেওয়া হবে না|
থাকা ও খাওয়া:
যেহেতু বরেন্দ্র জাদুঘরটি রাজশাহীর শহরে অবস্থিত তাই থাকা ও খাওয়া নিয়ে বাড়তি কোন চিন্তার প্রয়োজন নেই| রাজশাহী শহরে অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে| যেখানে আপনি পরিবার সহ রাত্রি যাপন করতে পারবেন| এছাড়াও অনেক স্বনামধন্য রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে আপনি উন্নত মানের খাবার পাবেন নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে|
একটু ভেবে দেখা
জাদুঘরটি বাংলাদেশে প্রথম তৈরি হয়েছিল| এ জাদুঘর থেকে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে| জাদুঘর থেকে বাংলার অতীত সম্পর্কে জানতে হবে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে| শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের এ জাদুঘর নিয়ে সকল তথ্য বিস্তারিত ভাবে জানানো| যেন তারা বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে
সাধারণ জ্ঞান
- বরেন্দ্র জাদুঘর কোথায় অবস্থিত? রাজশাহীতে
- বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘর কোনটি? বরেন্দ্র জাদুঘর
- বরেন্দ্র জাদুঘর কত সালে স্থাপন করা হয়? বরেন্দ্র জাদুঘর ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছিল|
[…] রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর […]