বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে কতটা ত্যাগ রয়েছে এদেশের মানুষের তা নাটোরের শহীদ সাগর নামক স্থানের ইতিহাস সম্পর্কে জানলে বোঝা যায়| পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের উপর কতটা নির্মম নির্যাতন করেছে তার একটি বাস্তব উদারহণ এই স্থানটি|
শহীদ সাগর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুরের ময়না গ্রামে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের সাথে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল| যুদ্ধের পর পাকিস্তানের সেনাদের মেজর রাজা খান পালিয়ে যাচ্ছিল. এমন সময় গ্রামের মানুষ তাকে গুলি করে হত্যা করে| এছাড়াও পাকিস্তানি সেনাবাহিনারা যেন ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে অবতরণ না করতে পারে তাই বাংলার মুক্তি কামে জনগণ বিমানবন্দরের রানওয়ে ভেঙ্গে অকুচো করে দিয়েছিল|উক্ত ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা অনেক বিক্ষুব্ধ হয়েছিল| যাতে করে গোপালপুরে এসে সবাই অনেক থমথমে অবস্থা বিরাজমান ছিল|
সে সময় গোপালপুরের চিনিকলটি সারাদেশের উৎপাদনশীল এর একটি বড় উৎস ছিল| জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সেটি খোলা অবস্থায় ছিল এবং শ্রমিকরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিলাম| হঠাৎ ৫ই মে সকাল দশটার দিকে কিছু রাজাকারের সহায়তায় পাক সেনারা মি -কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে, রাজাকারদের মিথ্যা অভিযোগে কারখানার প্রশাসক আনোয়ারুল আজিম এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও শ্রমিকদেরকে একটি পুকুরের পাশে নিয়ে ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে| নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পর পুকুরটি রক্তে লাল হয়ে যায়|উল্লেখ্য আছে যে মুক্তিযুদ্ধের পরেও পুকুরটিতে শহীদদের রক্তের জমাট বাধা অবস্থা দেখা যেত|
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই পুকুরটিকে শহীদ সাগর নামে অভিহিত করা হয়, এর আগে এই পুকুরটির নাম ছিল গোপাল সাগর|এখানে অবস্থিত গোপালপুর রেলস্টেশনটি শহীদ আনোয়ার উল আজিমের স্মরণে আজিমপুর স্টেশন নামে নামকরণ করা হয়|
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই পুকুরটিকে শহীদ সাগর নামে অভিহিত করা হয়, এর আগে এই পুকুরটির নাম ছিল গোপাল সাগর|
শহীদ সাগরে কিভাবে আসবেন:
বাস অথবা ট্রেনে করে আপনাকে প্রথমে নাটোর অথবা ঈশ্বরদীতে আসতে হবে| ঈশ্বরদী থেকে প্রথমে সিএনজি করে গোপালপুর যেতে হবে| গোপালপুর থেকে শহীদ সাগর পুকুরটির কাছে যেতে পারবেন| নাটোর থেকে অটো রিক্সা অথবা সিএনজি যগে ২০ টাকায় এখানে পৌঁছাতে পারবেন|
সংক্ষেপঃ
এটি আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে সাহায্য করে| তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে কতটা নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা এদেশের সাধারণ মানুষের উপর| মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিশংসভাবে হত্যা করতে পারে| এখান কার ইতিহাস থেকে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে দেশ প্রেমের উপর| কত মানুষ দেশকে স্বাধীন করার জন্য প্রাণ দিয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে| তাহলে আমরা আমাদের দেশের প্রতি সঠিক দেশ প্রেমটা জাগ্রত করতে পারবো|